বাংলা একাডেমী আজ ১৩ই পৌষ ১৪১৬/২৭শে ডিসেম্বর ২০০৯ রবিবার বিকেল ৪টায় একাডেমীর সেমিনার কক্ষে বাংলা সাহিত্যের দুই বরেণ্য লেখক ও বাংলা একাডেমীর ফেলো সৈয়দ শামসুল হক এবং কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের ৭৫তম জন্মদিন উপলক্ষে এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। আলোচনা করেন বাংলা একাডেমীর ফেলো কবি আসাদ চৌধুরী এবং কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদান করেন বাংলা একাডেমীর ফেলো কবি জাহিদুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমীর সভাপতি জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী।
অনুষ্ঠানে লেখকদ্বয়কে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে উপ-প্রেসসচিব শাকিল আহমেদ এবং প্রটোকল অফিসার প্রলয় কুমার জোয়ারদার; বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের এবং সহ-প্রচার সম্পাদক নাইম নোমান; দৈনিক সমকাল পত্রিকার পক্ষ থেকে কবি নাসির আহমেদ ও কবি ফারুক আহমেদ; জাতীয় কবিতা পরিষদের পক্ষ থেকে রফিক আজাদ, হাবিবুল্লাহ সিরাজী, আসলাম সানী, তারেক সুজাত, তপন বাগচী। আরও শুভেচ্ছা জানান বঙ্গবন্ধু লেখক পরিষদ, বাঙালি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, জাতীয় গীতিকবি পরিষদ।
স্বাগত ভাষণে বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, আজ আমরা এমন একটি মিলন মেলায় সমবেত হতে পেরেছি যে এরচেয়ে বড়ো আনন্দের, সুখের, উচ্ছ্বাসের দিন শিল্প-সাহিত্যের বুধমণ্ডলীর শাশ্বত সমাজে বোধহয় সাম্প্রতিককালে আর আসেনি। আমাদের সাহিত্য ক্ষেত্রে এই দুই বরেণ্য লেখক তাঁদের গল্প, উপন্যাস, ভ্রমণকাহিনী ও ব্যক্তিগত রচনায় যে মাধুর্যতা, গভীরতা, মানবিক বোধের তীব্রতা, সৌন্দর্যবোধ এবং যে নান্দনিক চেতনা ফুটিয়ে তুলেছেন, তার তুলনা সাম্প্রতিক সাহিত্যে খুব বেশি একটা দেখা যায় না। নিরলসভাবে এই দুই সাধক আমাদের সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করছেন, নানা মাত্রিকতা যুক্ত করছেন বাংলা সাহিত্যে। সেই মাত্রিকতায় কখনো গণতন্ত্রপ্রিয়তা, কখনো দেশের স্বাধীনতা, কখনো মানবাধিকারের বিষয় উঠে এসেছে। তিনি বলেন, বাংলা সাহিত্যকে যাঁরা বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেয়ার মতো মহান দায়িত্ব পালন করছেন, তাঁদেরকে বাংলা একাডেমী গভীর শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে।
শুভেচ্ছা বক্তব্যে কবি জাহিদুল হক বলেন, শত প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেও আমাদের সাহিত্যের যে অগ্রগতি তাঁর পেছনে এই দুই বরেণ্য লেখকের অবদান অনেক। তাঁদের প্রত্যেকের লেখায় রয়েছে নিজস্বতা।
কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন বলেন, দেশের দুই মহান লেখক আজকের এই দিনে জন্মগ্রহণ করে তাঁদের লেখনির মাধ্যমে বাংলা সাহিত্যকে পরিপূর্ণতা দান করেছেন। সৈয়দ শামসুল হকের লেখায় এত বৈচিত্র্য যাতে মনে হয় শামসুল হক একজন নন, তিনি অনেকজন। শিশুসাহিত্য, গান, চলচ্চিত্র, নাট্যচিত্রসহ সাহিত্য-সংস্কৃতি অঙ্গনের এমন কোনো বিষয় নেই যেখানে তাঁর সফল বিচরণ ঘটেনি।
কবি আসাদ চৌধুরী বলেন, রাবেয়া খাতুনের বড় কৃতিত্ব হচ্ছে তিনি তাঁর সাহিত্যের মাধ্যমে পাঠককে অতীতের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। সাহিত্যে তিনি নিজে রক্তাক্ত হন কিন্তু পাঠককে ঘাম ঝরাতে দেন না। তাঁর সাহিত্য সত্যকে উপলব্ধি করতে শেখায়। তিনি বলেন, দেশের বরেণ্য এই দুই লেখকের জন্মদিন উপলক্ষে বাংলা একাডেমীর এই আয়োজনের মাধ্যমে আজকের সূর্যোদয় সফল হয়েছে।
কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন বলেন, পুরুষ লেখক এবং নারী লেখকের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা ও সংগ্রামের ভিন্নতা থাকে। পুরুষের তুলনায় নারী লেখককে অনেক বেশি প্রতিবন্ধকতা অতিক্রম করতে হয়, প্রতিনিয়ত মুখোমুখি হতে হয় বিভিন্ন সংগ্রামের। তিনি বলেন, বাংলা একাডেমীর আজকের এই আয়োজন আমার বিগত জীবনের দুঃখ এবং কান্নার সান্তনা।
সৈয়দ শামসুল হক বলেন, কোনো লেখকের জীবদ্দশায় তাঁকে সংবর্ধিত করা বাংলা একাডেমীর মতো একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে খুবই কঠিন এবং এরকম একটি কঠিন কাজের আয়োজন করে বাংলা একাডেমী আজ একটি শুভ সূচনা করলো। আমি আশাকরি ভবিষ্যতে এর প্রবহমানতা অব্যাহত থাকবে। আমি জন্মেছি বাংলায় এবং বাংলা ভাষায় লিখতে পেরে আমি গর্ব অনুভব করছি।
সভাপতির ভাষণে জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী বলেন, বাংলা সাহিত্যের দুই বরেণ্য লেখক সৈয়দ শামসুল হক এবং রাবেয়া খাতুনকে তাঁদের জীবদ্দশায় সংবর্ধিত করতে পেরে বাংলা একাডেমী সম্মানিত বোধ করছে। তিনি বলেন, মৃত্যুপরবর্তী সংবর্ধনারও মূল্য আছে। তবে জীবদ্দশায় সংবর্ধিত করার মূল্য অনেক বেশি। এক্ষেত্রে লেখক তাঁদের সৃষ্টিশীলতায় আরও বেশি অনুপ্রাণিত হন।
অনুষ্ঠানে কবি সৈয়দ শামসুল হকের কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী শাহাদাত হোসেন নিপু এবং কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুনের রচনা থেকে পাঠ করেন আবৃত্তিশিল্পী কেয়া চৌধুরী। সংগীতানুষ্ঠানে রবীন্দ্র সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী মিতা হক এবং নজরুল সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। যন্ত্রাণুসঙ্গে ছিলেন রফিকুল আজাদ খোকন, গাজী আব্দুল হাকিম, আলমাস আলী, ইফতেখার আলম প্রধান।