২৪শে মাঘ/৬ই ফেব্রুয়ারি শনিবার বাংলা একাডেমী আয়োজিত মাসব্যাপী অমর একুশে গ্রন্থমেলার ষষ্ঠ দিন। সকাল ৮:০০টায় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন শিল্পী হাশেম খান। প্রতিযোগিতায় ক শাখায় ৪০৮, খ শাখায় ২৯৯ এবং গ শাখায় ৮২জনসহ মোট ৭৮৯জন প্রতিযোগী অংশ নেয়। অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীদের স্মারক উপহার হিসেবে বাংলা একাডেমী প্রকাশিত ‘সহজ বাংলা অভিধান’ প্রদান করা হয়। আগামী ১৮ই ফেব্র“য়ারি প্রতিযোগিতার ফলাফল প্রকাশ করা হবে। উত্তীর্ণ প্রতিযোগীদের ২৬শে ফেব্র“য়ারি শুক্রবার পুরস্কার প্রদান করা হবে।
বিকেলে গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে আলোচনা অনুষ্ঠানে ‘ভাষা-শহীদ আবুল বরকত’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন জনাব পাপড়ি রহমান। আলোচনায় অংশ নেন জনাব নূরুল করিম নাসিম ও জনাব আইনউদ্দিন বরকত। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক, লেখক রাহাত খান।
প্রাবন্ধিক পাপড়ি রহমান বলেন, জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশের ক্ষেত্রে ভাষা ও সংস্কৃতির গুরুত্ব সর্বাধিক। নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি ও সভ্যতাভিত্তিক জাতিসত্তার উদ্ভব ও উন্নয়নে ভাষা আন্দোলন যে বিশাল ভূমিকা পালন করেছে, পৃথিবীর ইতিহাসে তার দৃষ্টান্ত নেই বললে অত্যুক্তি হবে না। ভাষা-শহীদদের আত্মদানে বাংলাভাষার গৌরব পৃথিবীর সকল দেশে পৌঁছে গেছে। বিশ্ববাসী আজ জানে একুশে ফেব্র“য়ারি বাংলাদেশের মাতৃভাষা আদায়ে জীবন উৎসর্গকারী শহীদদের আত্মত্যাগের দিন। ভাষা-শহীদ আবুল বরকত প্রসঙ্গে প্রাবন্ধিক শহীদ বরকতের লেখা ৪টি চিঠি এবং গুরুত্বপূর্ণ উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কান্দি মহকুমার ভরতপুর থানার বাবলা গ্রামের মৌলভী শামসুজ্জোহা ওরফে ভুলু মিয়া ও হাজি হাসিনা বিবির তিন কন্যা আর দুই পুত্রের মধ্যে সবার বড় আবুল বরকতকে পরিবারের সবাই ‘আবাই’ নামে ডাকতো। ভদ্র, নম্র, বিনয়ী স্বভাবের অধিকারী আবুল বরকত সবসময় বইয়ের প্রতি মনোযোগী থাকতেন। তিনি বলেন, আবুল বরকত প্রত্যক্ষ রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও ভাষা-আন্দোলন এবং গণ-আন্দোলন সম্পর্কে তাঁর একটি সুস্থ গণমুখী চেতনা ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে এমএ অধ্যয়নকালে ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনে আবুল বরকত শহীদ হন।
জনাব আইনুদ্দিন বরকত বলেন, আমাদের ভাষা-আন্দোলন ছিল মূলত স্বাধীকার আন্দোলন যা সালাম, বরকত, রফিক, শফিউরেরা জীবনদানের মাধ্যমে বেগবান করে। তাঁদের আত্মত্যাগের মাধ্যমে আজ শুধু বাংলা রাষ্ট্রভাষাই হয়নি, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসেও স্থান করে নিয়েছে। তিনি বলেন, মহান ভাষা-আন্দোলনে জীবনদানকারী শহীদদের নিয়ে তেমন কোন কাজ হয়নি। তাঁদের যথাযথ মূল্যায়ন করার দায়িত্ব আমাদের সকলের।
জনাব নূরুল করিম নাসিম বলেন, শহীদ মিনার, বরকত, স্বাধীনতা আমাদের জাতীয় জীবনে প্রতীকে পরিণত হয়েছে। ভাষা-আন্দোলনে যাঁরা শহীদ হয়েছেন তাঁদের সবার পরিচয় আজও আমাদের অজানা। প্রকৃত ইতিহাস রচনার মাধ্যমে তাঁদের পরিচিতি নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। তাহলে দেশ ও জাতি উপকৃত হবে। তিনি বলেন, ভাষা-শহীদের উপরে বাংলা একাডেমী থেকে যে গ্রন্থমালা তৈরি হচ্ছে তা সত্যিই প্রশংসার দাবীদার।
সভাপতির ভাষণে কথাসাহিত্যিক রাহাত খান বলেন, জাতি যখন সংকটে পড়ে তখন সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে। কে হিন্দু বা মুসলমান তা দেখার অবকাশ থাকে না। বরকতের রাজনৈতিক পরিচয় খুঁজতে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ১৯৫২ সালের ২১শে ফেব্র“য়ারি আবুল বরকতেরা দেশের স্বাধীনতার জন্য যে মশাল জ্বালিয়ে দিয়েছেন তা আমাদের বহন করতে হবে। তিনি বলেন, শহীদ আবুল বরকতের নামে ঢাকা শহরে একটি পাঠাগার স্থাপন করতে হবে যেখান থেকে অনেকেই জ্ঞান অর্জন করতে পারবে। সভাপতি বলেন, বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা যতদিন থাকবে, ততদিন আবুল বরকত বেঁচে থাকবেন।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে লোকসংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী দিলরুবা খান, চন্দনা মজুমদার, মীনা বড়–য়া, বীনা মজুমদার, আবদুল হালিম খান, খগেন্দ্রনাথ সরকার, সঞ্জয় পাণ্ডে প্রমুখ। ‘আরশিনগর বাউল সংঘ’-এর শিল্পীবৃন্দ পরিবেশন করেন বাউলসংগীত। যন্ত্রাণুসঙ্গে ছিলেন শিল্পী প্রিয়ব্রত চৌধুরী, মোঃ ফারুক, হাসান আলী, আশুতোষ শীল ও সাঈদ হোসেন সেন্টু।
আজকের নতুন বই : ১৬০টি