পদ্মা সেতুর দুর্নীতি  নিয়ে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চলমান দ্বন্দ্ব সংঘাতের কারণে দেশের বৈদেশিক  মুদ্রার প্রবাহ কমে যাওয়ার আশংকা করছেন অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে,  আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বাংলাদেশ পিছিয়ে পড়তে পারে। রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বে,  এতে পণ্য আমদানিসহ বৈদেশিক দায় মেটানোর সক্ষমতা কমে যাবে। চলমান প্রকল্পসহ  নতুন প্রকল্পে অর্থায়ন করতে অন্য দাতাদের দর কষাকষি বেড়ে যাবে, এতে  প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বিত হবে। সবমিলে জাতীয় অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক  প্রভাব ফেলবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিশ্ব ব্যাংকের  সঙ্গে অন্য দাতা সংস্থার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ততা আছে। বিশ্ব  ব্যাংকের পরামর্শক্রমে তারা নতুন প্রকল্পে অর্থায়নের প্রতিশ্র“তি দিয়ে  থাকে। এখন বিশ্ব ব্যাংক অর্থায়ন না করলে অন্য দাতারাও বাংলাদেশকে সহায়তা  করতে বিবেচনা করবে। আর দাতারা মুখ ফিরে নিলে বিদেশী বিনিয়োগও কমে যেতে  পারে।
প্রকল্প বাস্তবায়নে বিলম্বিত হবে : পদ্মা সেতুর দুর্নীতি নিয়ে  বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে দ্বন্দ্ব সংঘাতের কারণে চলমান প্রকল্প ও নতুন প্রকল্প  বাস্তবায়নে বিলম্বিত দেখা দেবে। পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংক মুখ ফিরে নেয়ায়  দেশের চলমান প্রকল্প ও সম্ভাব্য নতুন প্রকল্পে সাহায্য সহায়তা পাওয়া কমে  যাবে। অন্য দাতারা এসব প্রকল্পে অর্থায়ন করতে আগের চেয়ে দর কষাকষি বেশি  করবে। অর্থায়নের আগে দুর্নীতির বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। সবমিলে অর্থনীতিতে  নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
বাংলাদেশের রেটিং খারাপ হবে : বৈদেশিক  মুদ্রার রিজার্ভ, রেমিট্যান্সসহ অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকের পাশাপাশি  আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের মানদণ্ড অর্থাৎ  রেটিং ভালো মন্দ নির্ণয় করা হয়। দুর্নীতির অভিযোগে বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু  থেকে মুখ ফিরে নেয়ায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বাড়বে। কমে যাবে  বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। এর পাশাপাশি অর্থসামাজিক বিবেচনায়ও দুর্নীতির  বিষয়টি প্রভাব ফেলবে। এতে আগামীতে দেশের রেটিং খারাপ হতে পারে।
বৈদেশিক  মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ বেড়ে যাবে : অর্থনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে,  রেমিট্যান্স, রফতানি আয়ের পাশাপাশি রিজার্ভের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ করে বৈদেশিক  সাহায্য বা অনুদান। যেসব প্রকল্পে দাতারা অর্থ ছাড় করে তা সরাসরি যুক্ত হয়  বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। বৈদেশিক অর্থ অবমুক্তি কমে গেলে বৈদেশিক মুদ্রার  রিজার্ভ কমে যাবে। আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেলে এর প্রভাব  অর্থনীতির নানা অঙ্গনে পড়বে।
আপৎকালীন সংকট মেটানো কষ্টসাধ্য হবে : দেশে  বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে, যেমন বন্যায় ফসল তলিয়ে গেলে বা খড়ায়  ফসলের ক্ষতি হলে উৎপাদন মারাÍক ব্যাহত হয়। উৎপাদন ব্যাপক কমে গেলে দেশে  দুর্ভিক্ষের আশংকা থাকে।
দুর্ভিক্ষের হাত থেকে রক্ষার জন্য সরকার বিদেশ  থেকে চাল, গমসহ খাদ্যদ্রব্য আমদানি করে থাকে। আর বিদেশ থেকে পণ্য কিনতে হলে  বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়োজন হয়। আপদকালীন এ সংকট মেটাতে সাধারণত বৈদেশিক  মুদ্রার রিজার্ভ রাখা হয়। আন্তর্জাতিক রীতি অনুযায়ী সাধারণত তিন মাসের ব্যয়  মেটানোর জন্য বৈদেশিক মুদ্রা সংরক্ষণে রাখার প্রয়োজন হয়। কোন দেশে এর কম  থাকলে তখন ঝুঁকির মুখে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমানে তিন মাসের মতো দায়  মেটানোর রিজার্ভ থাকলেও ভবিষ্যতে দায় মেটাতে কষ্ট হবে বলে বিশ্লেষকরা মনে  করছেন।
মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবে, বাড়বে মূল্যস্ফীতি  : রিজার্ভ কমে গেলে মুদ্রার বিনিময় হারের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হবে। স্থানীয়  মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে  রিজার্ভ বেশি রাখার প্রয়োজন হয়। সাধারণত, কোন পণ্যের চাহিদার তুলনায় সরবরাহ  বেশি থাকলে ওই পণ্যের দাম বেড়ে যায়।
কোন পণ্যের মজুদ যখন কমতে থাকে,  তখন ওই পণ্য ভোক্তা পর্যায়ে বেশি সংরক্ষণ হয়। আতংকগ্রস্ত হয়ে আপদকালীন সংকট  মেটানোর বিষয় মাথায় রেখে এ মজুদ করা হয়। এ কারণে রিজার্ভ যত কমতে থাকে  বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার তত অস্থিতিশীল হয়। তখন আপাতত: প্রয়োজন না হলেও  ভবিষ্যৎ চাহিদা পূরণের জন্য ব্যক্তি পর্যায়ে ডলার কিনে থাকে। এ কারণে,  রিজার্ভ বেশি থাকলে ব্যক্তি পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার সংরক্ষণ কম থাকে।
আবার  অনেক সময় আন্তর্জাতিক মন্দার কারণে ডলার সংকট হলে স্থানীয় পর্যায়ে প্রভাব  পড়ে। একারণেও স্থানীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বেড়ে যায়।  বিনিময় হার অস্থিতিশীল হলে অর্থনীতির ওপর নানা ধরনের প্রভাব পড়ে। প্রথমত,  বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্গে স্থানীয় মুদ্রার মান কমে গেলে আমদানি করা পণ্যের দাম  বেড়ে যায়। এতে স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় মূল্যস্ফীতির ওপর  চাপ বেড়ে যাবে।
                    